পলিটি নোটস— কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেস।

পলিটি নোটস— কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেস।


গোলকনাথ বনাম পাঞ্জাব সরকার ১৯৬৭।


ভারতের পার্লামেন্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে বরাবরই একটা লড়াই চলে এসেছে। পার্লামেন্ট যখন জমিদারি প্রথা তুলে দিতে চাইছে এমন সময় ১৯৫৩ সালে পাঞ্জাব সরকার জমির অধিকার সংক্রান্ত একটা আইন পাশ করল। এই আইনে বলা হল যাদের একরের পর একর জমি রয়েছে তাদের কাছে সামান্য কিছু জমি থাকবে এবং যারা সেই জমিতে চাষ করছে তাদের কাছে জমির মালিকানা থাকবে।


এই আইনের প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টের দরজায় হাজির হল জমিদার সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। সংবিধানের ফাঁক ফোকর খুঁজে বের করা গেল। Article 19(1)(f) তখন সম্পত্তির অধিকার সংক্রান্ত আইন ছিল, এছাড়াও Article 13 অনুযায়ী মৌলক অধিকারকে খর্ব করা চলবে না। এই দুটি আইনকে হাতিয়ার করে Article 32 অর্থাৎ আইনের বিরুদ্ধে অভিভাবকের কাছে (সুপ্রিম কোর্ট) এ হত্যে দেওয়া শুরু হল।


সুপ্রিম কোর্ট এই আইনের ফাঁকে নাক গলিয়ে ঘোষণা করল যে Article 368 এ শুধুমাত্র সংবিধানের সংশোধনের অধিকার আছে, সংবিধানের উৎস এটি নয়। কাজেই জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করা তো চলবেই না, উল্টে সরকারের যেটা মৌলিক কর্তব্য অর্থাৎ নির্দেশমূলক নীতি , সেটি ঠিকমতো প্রয়োগ করতে হবে জনসাধারণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষার তাগিদে। পাঞ্জাবে তখন জমিদারেরা সেলিব্রেশন শুরু করে দিল, ঠিক যেমনটা ভারতের বিরুদ্ধে করেছিল বাংলাদেশের টিম , যখন ৩ বলে ৩ রানের প্রয়োজন ছিল। কে জানত সেদিনের সেই ম্যাচে কি অপেক্ষা করছে, সেরকম কেউ জানত না যে এর পরে কেশবনন্দ ভারতীর কেসটা সব পাল্টে দেবে।


কেশবনন্দ ভারতী কেস— ১৯৭৩।


ঐতিহাসিক কেস বললেও ভুল হবে না। ১৩ জন বিচারকের জুডিশিয়াল বেঞ্চ, এদিকে রায় বেরোলো ৭-৬ এ ভোটাভুটির পর। টানটান উত্তেজনা কোর্ট চত্বরে। কেরলের এক মঠের প্রধান শ্রী কেশবানন্দ ভারতীর হয়ে কেস লড়েছিলেন ননী পাল্কিওয়ালা।


যাই হোক, গোলকনাথ কান্ডে সুপ্রিম কোর্ট পার্লামেন্টের দ্বারা মৌলিক অধিকারে অনাধিকার প্রবেশের ওপর কাঁচি চালিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু এই কেসে আদালত রায় দিল অন্যরকম। দেশের স্বার্থে আইনসভা মৌলিক অধিকার চেপে দিতেই পারে কিন্তু সংবিধানের basic structure বা বুনিয়াদি গঠনের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে না। অর্থাৎ কাল তুমি বলবে গণতন্ত্র হঠিয়ে সেনাশাসন চালাও, বা নতুন সংবিধান তৈরি কর— এই সব পাগলামি চলবে না।


এই কেসের পরে ব্যাঙ্কের রাষ্ট্রায়ত্তকরণ হল ( ২৫ তম সংশোধনী ) এবং Privy purses abolition act (Princely state এর শাসকদের পেনসন দেওয়া বা দান খয়রাতি করা বন্ধ) প্রণীত হল।


Minerva Mills Case


১৯৮০ সালের এই কেসটি সুপ্রিম কোর্টে যে ঝড় তুলেছিল তার রেশ সমস্ত বিসিএস বা আই এ এস পরীক্ষার্থীরা সিলেবাসের মাধ্যমে টের পাচ্ছে।


তৎকালীন সরকার ব্যবসায় ধুঁকতে থাকা বেসরকারী মিনার্ভা মিলসের সদর দরজার চাবিটা কেড়ে নিল Sick Textile Undertakings (Nationalization) Act, 1974. এর জুজু দেখিয়ে। কোম্পানির মালিকেরা রে রে করে সুপ্রিম কোর্টে দৌঁড়ল। এই সময় সুপ্রিম কোর্ট একটা বড় রায় দিল যা আমাদের সংবিধানের Basic Structure Doctrine কে নবজন্ম দান করল। আদালতের রায়ে এই নির্দেশ ছিল যে এমন কোনো আইন তৈরি করা যাবে না যা সংবিধানের Basic Structure কে আঘাত করে। অর্থাৎ তোমার বাড়িতে তুমি থাকছ, সরকার কোনো আইন করে তোমাকে সেখান থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না। কেন? সংবিধানের Article 21 দ্বারা আমাদের Right to life and personal liberty রয়েছে। সেখানে আইনসভা নাক গলাতে পারবে না। 

আবার এমন কোনো আইন তৈরি করা যাবে না যার Judicial Review হবে না। অর্থাৎ যা আইন কর না কেন, সুপ্রিম কোর্ট এর বলটি কোর্টের বাইরে রাখা চলবে না। আইনসভার সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতার সংশোধন করা হল এই কেসের রায়ে।


A K Gopalan Case , 1950


স্বাধীন ভারতের সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ মামলা। এই মামলায় Preventive Detention কে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। আমাদের সংবিধানের Article 21 নাগরিকদের বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে। এই বেঁচে থাকা ঠিক কি রকম বেঁচে থাকা সেই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। যিনি পিটিশনটি করেন, তাঁর বক্তব্য ছিল মানুষকে বেঁচে থাকতে গেলে নুন্যতম মাপকাঠির প্রয়োজন এবং সেটি natural justice এর পরিপন্থী হওয়া চলবে না। এদিকে সংবিধানের Article 19 এবং Article 13 এর পরিপন্থী এই আইন। এ যেন বিড়াল কুকুরকে গলায় চেন দিয়ে বেঁধে রাখার মতন।


কোর্ট অবশ্য এই যুক্তি মানতে নারাজ। কারণ natural justice বলতে প্রকৃতির নিয়ম কে বোঝায়। প্রকৃতির মাত্রা ও বিস্তার অসীম। কাজেই যার কোনো নির্দিষ্ট মাত্রা নেই, তার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের আইন বদলানো সম্ভব নয়। অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্ট এটা জানিয়ে দিল— পাগলের পাগলামি বাড়িতে চলে, কোর্টে নয়।


Maneka Gandhi Case


১৯৭৭ সালে পার্সপোর্ট আইনের জুজু দেখিয়ে মানেকা গান্ধীর পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে মানেকা জি আদালতে গেলেন এবং সংবিধানের Article 14, 19(1) (a) এবং 21 এর দ্বারা তাঁর যে অধিকার আছে সেটা তুলে ধরলেন।Article 21 তাঁকে বেঁচে থাকার অধিকার দিয়েছে এবং 19(1) (a) এর দ্বারা তাঁর স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে। এই দুটি অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।


কোর্ট রায় দিল— আমাদের দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারগুলি একে অপরের থেকে আলাদা নয়, বরং ওতঃপ্রোত ভাবে জড়িত। “personal liberty” এর অধিকারও বেঁচে থাকার অধিকারের অংশ, যে অধিকারে একজন যত্রতত্র ঘুরে বেড়াতে পারেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post